বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার কী?
বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার একটি আবেগজনিত মানসিক সমস্যা। বাইপোলার অর্থ হচ্ছে দুটি পোল বা মেরু। এক মেরুতে থাকে বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন, যেখানে আবেগের প্রকাশ কম, কোনো কিছুই ভালো লাগে না, দুঃখবোধ হয়। অন্য মেরুতে অতি উৎফুল্লতা বা ম্যানিয়া, যেখানে আবেগের প্রকাশ বেশি। কখনো ম্যানিয়া আবার কখনো বিষণ্নতা দেখা যায়। আর মাঝখানের সময়টায় সাধারণত সম্পূর্ণ ভালো থাকে। অনেক সময় বিষণ্নতার প্রকাশ খুব একটা হয় না, কেবল ম্যানিয়া নিয়েও এ সমস্যা প্রকাশ পেতে পারে।
বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার কেন হয়?
মস্তিষ্কে নরঅ্যাড্রেনালিন, সেরোটনিন, ডোপামিন জাতীয় বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের (একধরনের রাসায়নিক উপাদান) ভারসাম্যহীনতা, তীব্র মনঃসামাজিক চাপ, স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা, নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণ ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। আর বংশে কারও এ সমস্যা থাকলে অপর সদস্যদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার কাদের হয়?
নারী-পুরুষ উভয়েরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সমান। সাধারণত তরুণ বয়সে এই রোগের লক্ষণ শুরু হয়, তবে যেকোনো বয়সেই এমনকি শিশুদের ও বৃদ্ধ বয়সেও এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায়, এক হাজার জন মানুষের মধ্যে ৩ থেকে ১৫ জনের রোগটি রয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক যৌথ জরিপের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রতি ১০০০ জন মানুষের মধ্যে ৪ জন বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ:
বিষণ্ণতায় – বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ:
এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা কখনো বিষণ্ন থাকবে আবার কখনো অতি উৎফুল্ল (ম্যানিয়া) থাকবে। বিষণ্নতার প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে:
- অশান্তি বোধ, হতাশা, মন খারাপ, বিনা কারণে কান্নাকাটি করা
- আনন্দদায়ক বিষয় ও ঘটনায় আনন্দ না পাওয়া
- আত্মবিশ্বাস কমে আওয়া, নিজেকে হীন, তুচ্ছ অকর্মণ্য মনে করা
- নিজেকে দোষী ভাবা
- ভুলে যাওয়া
- আত্মহত্যার চিন্তা, প্রবণতা ও মরে যাওয়ার ইচ্ছা
- সাধারণত খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়া
- ক্ষিদে কমে যাওয়া বা কখনো অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ
- ওজন কমে যাওয়া বা ওজন বেড়ে যাওয়া
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা ও মাথাসহ শরীরে জ্বালা-পোড়া
- যৌনস্পৃহা কমে যাওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ
- নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সমস্যা
কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে বিষণ্নতার লক্ষণ থাকলে তবে রোগীর বিষণ্নতা আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
উৎফুল্লতায় বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ:
- অতি উৎফুল্ল, মনে সব সময় ফুর্তি আর আনন্দ অনুভব, খিটখিটে মেজাজ অথবা রাগান্বিত ভাব
- অতিরিক্ত, দ্রুত ও উচ্চস্বরে বেশি বেশি কথা বলা
- নিজেকে বড়, ক্ষমতাশালী, বিশেষ শক্তির অধিকারী মনে করা
- এক চিন্তা থেকে আরেক চিন্তায় দ্রুত চলে যাওয়া
- অতিরিক্ত কর্মতৎপর হয়ে যাওয়া, শরীরে ও মনে অতিরিক্ত শক্তি ও ক্ষমতা অনুভব করা।
- মনোযোগ কমে যাওয়া
- বেশি বেশি খরচ করা, কেনাকাটা করা, জমি-বাড়ি কেনা বা বিক্রি করা
- ঘুমের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়া অর্থাৎ ঘুম এলেও ঘুমাতে না চাওয়া
- নিজেকে মোটেই কোনো রোগী বলে স্বীকার না করা
- হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, উত্তেজিত হয়ে অন্যকে আঘাত করা, ভাঙচুর করা
- অপ্রাসঙ্গিকভাবে গান গাওয়া, নাচা
- যৌনস্পৃহা বেড়ে যাওয়া, একাধিক বিয়ে করা
- মাদক গ্রহণ করা
ম্যানিয়া নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহ কমপক্ষে এক সপ্তাহ থাকতে হবে।
বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার এর চিকিৎসা:
সঠিক সময়ে রোগটি শনাক্ত করার পর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ধৈর্য ধরে ওষুধ সেবন করলে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ব্যক্তি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। কখনো কখনো হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হতে পারে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে সম্পদ বিনষ্টসহ আত্মহত্যা বা অপরকে হত্যার মতো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। এদের মধ্যে মাদকে আসক্ত হওয়াসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি।
অভিভাবকদের করণীয়:
- বাইপোলারের লক্ষণ দেখা দিয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে অযথা তর্কে জড়াবেন না।
- তাকে অপরাধী মনে করবেন না, উত্ত্যক্ত করবেন না। তার কোনো আচরণের জন্য দায়ী করে মারধর করবেন না।
- দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। মনে রাখবেন বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার একটি সাইকোসিস ঘরানার রোগ, যার মূল চিকিৎসা হচ্ছে নিয়মিত ওষুধ সেবন। কোনো প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে ওষুধকে ভয় পাবেন না।
- এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির কেনাকাটা, ব্যাংকের কাগজ, ক্রেডিট কার্ড, জমি ও বাড়ির দলিল অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ এ সময় অযৌক্তিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা রয়েছে।
- মনে রাখবেন বিয়ে এই সমস্যার চিকিৎসা নয়। তাই সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রণ না করে বিয়ে দেবেন না।
- সতর্ক নজরদারিতে রাখুন। এ সময় সে আত্মহত্যাসহ নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে যেতে পারে। তার সব ওষুধ অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে রাখুন।
- মাদক সেবন থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকুন। মাদক তার লক্ষণগুলোকে আরও বাড়াবে।
Sharmin Akter Shetu – a graduate Psychologist and Psychotherapist in Bangladesh. She’s been trained for Psychotherapy (PG), Neuro Linguistic Programme (NLP), Transactional Analysis (TA), Cognitive Behavior Therapy (CBT), Systemic Family & Couple Therapy (SFCT), Psychodrama, Mindfulness, mh-GAP, Psychological First Aid (PFA), Mental Health First Aid (MHFA) etc.
She also has multiple Assessment Experience including;
» Stress measurement Scale.
» Anxiety measurement Scale.
» Hopelessness measurement Scale.
» Wechsler Intelligence Scales for Children (WISC-IV).
» Wechsler Pre-School & Primary Scales of Intelligence (WPPSI-III) (Senior & Junior).
» Independent Behavior Assessment Scale (IBAS).
» RENELL Zinkin scales of Development for Young visually handicapped Children (RZS).
» BAYLEY Scales of Infant Development (BSID-II).
» Autism Diagnostic Observational Schedule (ADOS -2).
» Stanford Binet Intelligent Test.
» Wide Range Achievement Test (WRAT)